ডিষ্ট্রিক্ট করসপন্ডেন্ট, কুষ্টিয়া:
এই দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দৃশ্যমান রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। আমরা ইতিপূর্বেও লক্ষ্য করেছি, অনেক কঠোর আইন এই দেশে প্রণয়ন করা হয়, তবে সেটির বাস্তবায়নে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটে।

দেশে চলমান একের পর এক ধর্ষন ও যৌন-নিপীড়ন-নির্যাতন ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কুষ্টিয়ায় সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকেলে শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর ওপর, স্বাস্থ্যবিধি মেনে, নিরাপদ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে স্বতঃফূর্ত এক প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে সারাদেশে চলমান ধর্ষন ও যৌন-নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করা হয়। একই সাথে, শাহবাগ থেকে ঘোষিত ৯ দফা দাবির সাথেও একাত্মতা ঘোষনা করা হয়। দাবি গুলো হলো:

১. সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সব ধরনের যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
৩, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরােধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ:বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন ও প্রথা বিলােপ করতে হবে।
৪. ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরােধী বক্তব্য শাস্তিযােগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।

৫. তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে।
৭. ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫ (৪) ধারা বিলােপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে।
৮. পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনাে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে।
৯. গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযাগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযােগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
এছাড়াও, যৌন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমে সেক্স-এডুকেশন সংযুক্ত করার দাবি জানানো হয়।

উক্ত মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে একাত্নতা ঘোষণা করে।
পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে, আজ ১৪ অক্টোবর কুষ্টিয়ার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে, বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থান গ্রহণ করা হয়। এই সময়ে তারা বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন।
শহীদ মিনারে অবস্থানরত সময়ে তারা তাদের আশেপাশের বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিকটু দৃশ্যকে বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরে এবং সমাজের কাছে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে।
আগেরদিন ১৩ অক্টোবর থেকে চলমান সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ণ বিরোধী কর্মসূচির দ্বিতীয়দিনে আজ কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।

উক্ত অবস্থান কর্মসূচিতে, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের সাধারন নাগরিক অংশগ্রহণ করেন।
শাহাবাগ থেকে ঘোষিত ৯ দফা দাবি ও যৌন সচেতনতা তৈরীতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে সেক্স এডুকেশন বাধ্যতামূলক করার দাবী জানানো হয়।
উক্ত অবস্থান কর্মসূচীতে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিগণ বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে, নারীর প্রতি সহিংসতা, আইনের দূর্বলতা, প্রচলিত আইনে “ভিক্টিম-ব্লেমিং”, গ্রাম্য-শালিসে ধর্ষিতার সাথে লিয়াজো, ৯ দফা দাবি, নারীর সম্মতির মত বিষয়গুলো উঠে আসে, এর প্রতিবাদ ও সংস্কারের দাবি জানানো হয়।

ঢাকা থেকে চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা রেখে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষনা দেয়া হয়।
প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এতে, সর্বস্তরের মানুষকে অংশগ্রহণ করার আহবান জানান, অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।