উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে করসপন্ডেন্ট:
শীতের এ শুষ্ক মৌসুমের ব্যস্ত সময় পার করছে উখিয়া ও টেকনাফ উপকূলীয় জেলে পল্লীর মৎস্যজীবীরা। শীত মৌসুমের শুরু থেকে সাগর হতে আহরিত মাছ রোদে শুঁকিয়ে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে শুঁটকিতে রূপান্তর করছে তারা। মৌসুমের শুরুতে ফিশিং বোট গুলোর জালেও বেশ আটকা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সহনীয় দামের সুযোগে কাঁচা মাছ ক্রয় শুকানোসহ সংরক্ষণের কাজ চলছে জোরেসোরে।
সরেজমিনে সমুদ্র উপকূল জুড়ে বাঁশের মাঁচায় সূর্যের তাপে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সাগর থেকে আহরিত কাঁচা মাছের জলীয় অংশ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। কেউ কেউ মাছের গ্রেডিং করছে। কাউকে মাছ ওলট-পালট করে পরিচর্যা করতে দেখা গেছে। শুঁটকি তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়- চিংড়ি, ছুরি, লইট্যা, চাপা, পোয়া, রূপচাঁদা, ইলিশ, হাঙ্গর, ফাইস্যাসহ হরেক রকমের ছোট মাছ।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের দু’পাশে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি পয়েন্টে মাছ শুকানোর কর্মযজ্ঞ চলছে। উখিয়া’র মাদারবনিয়া, মনখালী, টেকনাফের নাজির পাড়া, জাইল্লাপাড়া, জাহাজপুরা, শাপলাপুর, শাহপরীরদ্বীপে শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়া করণের বেশ কিছু মোকাম চোখে পড়ার মতো।
শাপলাপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাজেদ জানান, প্রতিটি খলা বা মোকামে ২০/২৫ জন লোক কাজ করে। এ ধরনের ৫টি খলা আছে তার। সপ্তাহখানিক রোদে শুকিয়ে নিলে মাছ শুঁটকিতে পরিণত হয়। প্রতি মৌসুমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে ব্যবসায়ীদের নিকট ৭/৮ লক্ষ টাকার শুঁটকি বিক্রি করেন। অনেক বেশি স্বাদ ও মজাদার হওয়ায় দেশের বিভিন্নস্থানে এ অঞ্চলের শুটকি মাছের বেশ চাহিদা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিমত।

মনখালি গ্রামের দিল মোহাম্মদ বলেন, কেবল লবণের পানি ব্যবহার করে কাঁচা মাছগুলো রোদে শুকানো হয়। কোনো অবস্থাতে কীটনাশক বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। শীতের এ শুষ্ক মৌসুম হচ্ছে মাছ শুকানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় জেলেদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ ক্রয় করে তা শুকিয়ে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। শুঁটকি পল্লীর মৎস্যজীবীগণ তাদের উৎপাদিত বা প্রস্তুতকৃত শুঁটকি সরাসরি পাইকারের কাছে বিক্রি করে। আবার স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারাও নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বর্তমানে ছুরি মাছ প্রতি মণ ২৬ থেকে ২৮ হাজার টাকা, পাইস্যা মাছ ১৪ থেকে ১৬ হাজার, লইট্টা ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা ও পোয়া মাছ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রীম দাদন নিলে শুঁটকি আরও কম দামে বিক্রি করতে হয়।
উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি গফুর মিয়া চৌধুরী বলেন, শুঁটকি বাংলাদেশের একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শিল্প। কিন্তু এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তাদের সরকারি-বেসরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে তাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায় দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের চড়া সুদের গ্যাড়াকলে পড়ে হয়ত এ ব্যবসা এক সময় লোকসানে পরিণত হবে।
তাই শুঁটকি শিল্পকে সম্প্রসারণ ও লাভজনক এবং দাদন মুক্ত করতে সরকারের নজর দেয়ার দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে বাস্তবসম্মত আধুনিক প্রশিক্ষণ দেয়া হলে মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন বৃদ্ধি করে এ শিল্পকে সম্ভাবনাময়ী করে সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে জানান তারা।